বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সত্ত্বেও দারিদ্র্যের চিত্র ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলেও কার্যকারিতার প্রশ্ন রয়ে গেছে। এখন ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় দাঁড়িয়েছে মোট আয়ের ৩৩ শতাংশে, আর দরিদ্রতম ৫ শতাংশের আয় নেমে এসেছে অর্ধেক শতাংশে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে নেই, কিন্তু একেবারে ওপরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘অনেকে নাক বরাবর পানিতে দাঁড়িয়ে আছে, সামান্য ঢেউ এলে তারা তলিয়ে যাবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, দারিদ্র্যসীমার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের প্রতি মনোযোগ না দিলে সামান্য অর্থনৈতিক ধাক্কাতেই তারা তলিয়ে যাবে। তাই দরকার শক্তিশালী রাজস্বনীতি, সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ও প্রকৃত দরিদ্রকে চিহ্নিত করার সঠিক ব্যবস্থা। অন্যথায় দারিদ্র্য আরো গভীর হতে পারে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪.৭৮ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ১.৮৭ শতাংশ।চলতি অর্থবছরে কর্মসূচির সংখ্যা কমিয়ে ৯৫-এ আনা হয়েছে, যা আগে ছিল ১৪০। সরকার থেকে ব্যক্তি অর্থ প্রদানের ডিজিটাইজেশন, নগদভিত্তিক সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন ও জীবিকা নির্বাহের সঙ্গে আর্থিক সহায়তাকে যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতা, বিশ্লেষক, সংসদ সদস্য প্রার্থী মাহবুব চৌধুরী বলেন, দেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষ এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। যুব বেকারত্ব, শহর-গ্রামের বৈষম্য, বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের উচ্চহার স্থিতিশীল উন্নয়নের পথে বড় বাধা। দেশের অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির। সর্বজনীন সুরক্ষার মধ্যে স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।সামাজিক সুরক্ষা দাতব্য নয় বরং মৌলিক ন্যায়বিচারের অংশ।সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে প্রকৃত দরিদ্র, অক্ষম, নারী, শিশু ও ঝুঁকিতে থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ জন্য সদিচ্ছা অপরিহার্য।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেকারত্বের বেড়ে হয়েছে ৪.৬৩ শতাংশ। দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখে। নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় এ হার আরো উদ্বেগজনক। একই সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৩.৯৭ শতাংশে, যা কভিডকাল বাদ দিলে গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।প্রথমবারের মতো প্রকাশিত বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকের (এমপিআই) তথ্যে দেখা যায়, অন্তত চার কোটি মানুষ আয় ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মৌলিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত।