
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর এবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে উদযাপিত হতে যাচ্ছে ঈদুল আজহা। এবার ঈদুল আজহা উদযাপন হতে যাচ্ছে এমন সময়, যখন দেশ প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফেরার পথে। এবার সবচেয়ে বেশি আলোচনা রাজনীতি ও নির্বাচন। কত দিন থাকবে অন্তর্বর্তী সরকার, সংস্কার কতটা হবে—এ প্রশ্ন এখন সর্বত্র। এর মধ্যে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া, আর্থিক মন্দা, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রায় অচলাবস্থাও অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
ঈদ রাজনীতিমুখী। নেতারা যার যার এলাকায়। লক্ষ্য নির্বাচনের আগে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। একইসঙ্গে ভোটের প্রস্তুতিও রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের। ঈদ ঘিরে চাঙ্গা তৃণমূলের রাজনীতি। ভোটের আগে এটিই হবে শেষ ঈদ। এ কারণে ঈদের সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কোরবানি দিয়েছেন। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রায় সবাই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদে।
রাজনৈতিক দলের সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করেন। সেখানে তারা কোরবানি দিয়েছেন। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। এসব কর্মসূচিতে জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কী কী করবে, তা তুলে ধরেন নেতারা। একইসঙ্গে নিজ নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নে দেবেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।
ওদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিসসহ ইসলামী দলগুলোর নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করছেন। এসব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে কাজ করছেন। গণ-অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংগতি আন্দোলনসহ বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা দলগুলোর যেসব নেতা নির্বাচন করতে চাইছেন তারাও নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের শাসনে তথাকথিত বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির নেতারা অনেকটা বেকায়দায় আছেন। তাদের অনেকে এলাকায় এখনো প্রকাশ্যে যেতে পারছেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশানে ফিরোজায় বাসভবনে ঈদের নামাজ পড়েছেন। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে স্থানীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এ ছাড়া বিএনপি‘র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ঈদের নামাজ ঢাকাতেই পড়েন। ওদিকে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদের নামাজ পড়েছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্যরা, কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সাবেক সংসদ সদস্যরা এবং সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন।দলটির অনেক সিনিয়র নেতার মধ্যে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে বাসায় রয়েছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, বেগম সারোয়ারী রহমান অসুস্থ। তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ বাসায় নামাজ আদায় করেন। ভাইস চেয়ারম্যান ড. উসমান ফারুক ও আইসিটি সম্পাদক ড. ওয়াহিদুজ্জামান আমেরিকায় ঈদের নামাজ আদায় করেন।
ওদিকে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান মৌলভীবাজার জেলায় নিজ গ্রামে, নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় নিজ গ্রামে, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় নিজ গ্রামে, মাওলানা শামসুল ইসলাম চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় নিজ গ্রামে, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সৌদি আরবের পবিত্র মক্কায় ঈদের নামাজ পড়েন। এ ছাড়া দলের জাতীয় নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীসহ নেতারা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদ্যাপন করছেন।
বিএনপি নেতা, সংসদ সদস্য প্রার্থী, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রাত্তন কেন্দ্রীয় নেতা, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জননেতা মাহবুব চৌধুরী বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট মুক্ত পরিবেশে পবিত্র ঈদে আমরা আশাকরি, মানুষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। এখনো নানা ধরনের অশান্তি বিরাজ করছে। দেশের মানুষ যে আশা করে দেশে পরিবর্তন করেছে, সেই আশা পূরণ হবে। আমরা আশাকরি, অর্থনৈতিক, সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতের প্রায় নেতারাই নিজ নিজ এলাকায় এবার পবিত্র ঈদ উদ্যাপন করবেন। সেখানে জনগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং গণসংযোগ করবেন তারা।
এনসিপি‘র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, যেহেতু সারা দেশে কমিটি গোছানোর কাজ করছি। এখন নির্বাচনমুখী ক্যাপিং করছি না। আসনভিত্তিক কাজ আরও পরে। কারণ জুলাই সনদসহ বেশকিছু বিষয় এখনো হয়নি। তাই এখন আমরা সংগঠন গোছানোর লক্ষ্যে কাজ করছি।