Saturday, June 14, 2025
Saturday, June 14, 2025
Homeবিশেষ প্রতিবেদনগোপালগঞ্জে ডাক্তারের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু, প্রশ্নের জেরে পিতাকে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ।

গোপালগঞ্জে ডাক্তারের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু, প্রশ্নের জেরে পিতাকে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ।

মো. শিহাব উদ্দিন, গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, সন্তান হারিয়ে পিতার শোকের মধ্যে প্রতিকার চাইতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে মারধরের শিকার হন তিনি। পরে উল্টো তার বিরুদ্ধেই মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোনো সময় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে শোকাহত পরিবার
নবজাতকের মা সোহেল হাওলাদারের স্ত্রী গণমাধ্যমকে জানান,

“আমার সন্তানকে ভুল চিকিৎসা ও ওষুধের কারণে হত্যা করা হয়েছে। কর্তব্যে গাফিলতি ছিলো স্পষ্ট।”

তিনি আরও বলেন, গত ২৯ মে বৃহস্পতিবার নবজাতকের মৃত্যু ঘটে। এরপর ১০ জুন, তার স্বামী সোহেল হাওলাদার চিকিৎসকের কাছে এর কারণ জানতে গেলে তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

অভিযোগের তীর কোটালীপাড়া ১০০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অনুপম বাড়ৈ-এর দিকে। বর্তমানে তিনি গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ৫ম তলায় একটি এসি রুমে অবস্থান করছেন।

গণমাধ্যমের সামনে ‘অসুস্থতার নাটক’?
ঘটনার তদন্ত করতে গেলে গণমাধ্যমকর্মীরা চিকিৎসক অনুপম বাড়ৈর রুমে গিয়ে তার শারীরিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে চাইলে তিনি গুরুতর অসুস্থতার ভান করেন এবং তার অ্যাটেনডেন্ট গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান।

পরবর্তীতে দালালের মাধ্যমে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলেও সাংবাদিকরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী,

অনুপম বাড়ৈর শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন ছিল না,

এমনকি সালাইন পুশের সূচও ঠিকমতো প্রবেশ করানো হয়নি,

তাকে ফুলশার্ট ও চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল, যেন আঘাত না থাকলেও তা লুকানো যায়।

এ সব কিছু মিলিয়ে চিকিৎসকের ‘অসুস্থতার নাটক’ সাজানোর অভিযোগ উঠেছে।

অফিস সহকারীর অস্বচ্ছ বক্তব্য
এই ঘটনায় কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী এবং মামলার বাদী হাফিজুর রহমান বলেন,

“আমি বিস্তারিত জানি না, ফেসবুকে দেখেছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি বাদী হয়েছি।”

তার এ বক্তব্য পুরো ঘটনার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

জনগণের প্রশ্ন ও দাবি
স্থানীয়রা দাবি করছেন,

এই ঘটনায় অবহেলার জন্য দায়ী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিচারিক তদন্ত হওয়া উচিত,

ভুক্তভোগী পরিবারকে বিচার ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে,

একজন পিতা সন্তানের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইবে, সেটিকে অপরাধ হিসেবে দেখানো অমানবিক।

সর্বশেষ :
এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়—চিকিৎসা খাতের মানবিকতা, পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতার উপর আস্থা হারানোর ইঙ্গিত দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটে।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক মন্তব্য

%d bloggers like this: