Wednesday, August 13, 2025
Wednesday, August 13, 2025
Homeসারা বাংলাডিমলায় তিস্তানদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, জমিজমা আর জীবনের শেষ সম্বলটুকুও।

ডিমলায় তিস্তানদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, জমিজমা আর জীবনের শেষ সম্বলটুকুও।

মো: জাহিদুল ইসলাম,
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তাপাড়ের গ্রামগুলো আবারও ভয়াবহ নদীভাঙনের কবলে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে একের পর এক পরিবার।

নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, জমিজমা আর জীবনের শেষ সম্বলটুকুও।অথচ দুর্যোগের এই মুহূর্তে স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তার ছোঁয়াও মেলেনি এখনো। নদী ভাঙনের তীব্রতায় আতঙ্কিত তিস্তা পাড়ের মানুষ । সরজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তিস্তার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম দুটোর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়েই রয়েছে নদীর বাঁধ ভাঙন। কোনো জায়গায় তলিয়ে যাচ্ছে বাড়ি-ঘর, আবার কোথাও বা ২ শত থেকে আড়াই শত মিটার দূরে চলছে ভাঙন।

ডিমলা উজেলার তিস্তাপাড়ের ২ টি ইউনিয়নের পূর্ব দুহলপাড়া ও পূর্ব বাইসপুকুর গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন। নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে প্রায় গ্রাম দুটোর বসতবাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। পাশাপাশি ঘরবাড়ি বিলীনে সর্বশান্তের আশঙ্কায় পড়েছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ। বন্যা না হলেও ভারি বর্ষণেই যেকোনো সময় গ্রাম দুটির কিছু অংশ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখছেন এলাকাবাসী। স্পার কিংবা গ্রোয়েন বাঁধ দেওয়া না হলে কিছুতেই ঠেকানো যাবে না এ নদী ভাঙন।

এদিকে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এতে নিম্নাঞ্চলে ঢুকছে পানি।

এলাকাবাসী জানায়, নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬ টি ইউনিয়নই তিস্তার তীরবর্তী বন্যাকবলিত এলাকা। বন্যা না হলেও ভারি বর্ষণ হলেই ৬ টি ইউনিয়নের বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। তাছাড়া নদীর বাঁধ ভাঙন প্রবণতা কমবেশি সব সময়ই থাকে। প্রতিবছরই বন্যায় ভাঙনসহ পানিতে তলিয়ে বা ভেসে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়। বর্তমানে খগাখড়িবাড়ী ও খালিশা চাপানি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম পূর্ব দুহলপাড়া ও পূর্ব বাইশপুকুর এলাকায় নতুন করে দেখা দিয়েছে নদি ভাঙন। কিছু জায়গায় ভাঙনে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার শেষ অপেক্ষায় আবার কিছু জায়গায় ভাঙন বসতবাড়ি থেকে ২ শত থেকে আড়াই শত মিটার দূরে আবস্থান করছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ভাঙন ঠেকানো না গেলে এবারে তারা নিঃস্ব হবেন, রাস্তায় ঠাঁই হবে তাদের।

তিস্তা নদীভাঙনে ইতোমধ্যে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও শত শত বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ভাঙন তুহিন বাঁধের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে, যা বাইশপুকুর, ছাতুনামা, কেল্লাপাড়া এবং পার্শ্ববর্তী জলঢাকা উপজেলার হলদিবাড়ী ও ডাউবাড়ীসহ কয়েকটি গ্রামকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই বাঁধ ভেঙে গেলে আশ্রয়ন প্রকল্প, আশ্রয়ন সেল্টার, বাইশপুকুর ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইশপুকুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির এবং লক্ষাধিক মানুষের বসতি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “এক রাতে আমার সব ঘরবাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে বাঁধের উপরেই থাকি। বাঁধও ভেঙে গেলে আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকবে না।

জানা যায় ইতিমধ্যে, উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙন রোধ, স্থায়ী সমাধান এবং তুহিন বাঁধ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরের পর তিস্তা নদীর তীরে আয়োজিত এই মানববন্ধনে শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব দুহলপাড়া গ্রামের আশিনুর আখি বলেন, ‘ইন্টার পাস করে যখন আমার বিয়ে হয়েছিল, এই নদীর মাঝকাখানে আমার শ্বশুরের ১১ বিঘা জমি ছিল। শ্বশুর বলেছিল তুমি আমার একমাত্র ছেলের বউ, চাকরি করার দরকার নেই। সেই জমি এক এক করে সব তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমার বসতভিটার আধা বিঘা জমি ছাড়া কিছুই নেই। এই বসতভিটার জমি নদীতে ভেঙে নিয়ে যায়, তাহলে এই নদীপাড়ের মানুষগুলো আমরা কই গিয়ে দাঁড়াবো। রাস্তায় দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

পূর্ব দুহলপাড়া বাসিন্দা রুহুল আমিন জানান, আর দু’হাত ভাঙলেই একমাত্র আশ্রয়স্থল বাড়িটি চলে যাবে নদীগর্ভে। এক সপ্তাহ আগে ছাগলের খামারটি নদীগর্ভে চলে গেছে। গরুর খামারটি যাওয়ার উপক্রম । এটি চলে গেলে কী করে খাব।খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত তিস্তা পাড়ের গৃহবধু লাইলী বেগম বলেন, আমাদের জমি জায়গা সব গেছে নদীতে ।১২ বিঘা জমিতে আমন করেছি সেটাও শেষ। এখন চাষাবাদ করে খাওয়ার মতো কনো কিছুই নাই।

তিস্তায় ক্ষতিগ্রস্ত একই গ্রামের কৃষক আয়নাল হক জানান, ডিমলায় তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার বিঘা আবাদী জমি ও ঘরবাড়ি। প্রতিদিন নদীগর্ভে আবাদি জমি ও ঘরবাড়ী বিলীনের আশঙ্কা ভাঙন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে নদীপাড়ের মানুষ। দক্ষিণ খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ২নং ওয়াড মেম্বার বজলার রহমান জানান, ইতোমধ্যে বেশ কিছু বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের আবাদি জমি ও বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সব সময় ভাঙছে আবাদি জমি। সকালে দুইবিঘা দেখে গেলে পরদিন পাঁচ বিঘা নেই।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক মন্তব্য

%d bloggers like this: