Friday, September 19, 2025
Friday, September 19, 2025
Homeবিশেষ প্রতিবেদনডিমলায় পাউবো কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় বোমা মেশিন দিয়ে তিস্তা হতে অবৈধভাবে বালু...

ডিমলায় পাউবো কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় বোমা মেশিন দিয়ে তিস্তা হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।

মো: জাহিদুল ইসলাম,
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি।

নীলফামারীর ডিমলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশ পুকুরে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় তিস্তা নদীর ডান তীরে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা হতে শক্তিশালী বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি প্রভাবশালী চক্র ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরীর সাথে জোকসা যোসে তিস্তা নদীর ডানতীরের ভাঙ্গন এলাকার তিস্তা নদীর ১০০ ফুট গভীর তলদেশ হতে বালু উত্তোলন করছে।

তিস্তায় চতুর্থ বারের হওয়া বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যার পরবর্তী তিস্তার ডানতীঁর এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙছে তো ভাঙছেই মাঠের পর মাঠ । তিস্তা অববাহিকা তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নের ১৫ টি মৌজার প্রায় ১৫ হাজার একর সদ্য রোপনকৃত আমন ক্ষেত ভেঙ্গে নদীগর্ভে চলে গেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৯ টি মৌজা । চতুর্থ বারের এ বন্যায় পানির প্রবাহে তিস্তা নদীর ডানতীরের ছোটখাতা মৌজার অর্ধেকোই নদী গর্ভে চলে গেছে। নতুন নদীর সৃষ্টি হয়ে সহস্রাধিক একর আমন ক্ষেত সহ আবাদী জমি এখন তিস্তা নদী । কয়েকদিন আগের ফসলি মাঠ এখন তিস্তা নদীর অথই জল। খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশ পুকুর নামক স্থানে ডান তীরে এলাকায় ৪টি স্থানে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন রোধে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ( পাউবো) ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভাঙ্গন রোধে ইমারজেন্সি ওয়ার্কের কাজ শুরু করেছে। তবে এলাকাবাসী অভিযোগ , পানি উন্নয়ন বোর্ড আত্মঘাতী কাজ করছেন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলোর ভাঙ্গন পয়েন্ট কমপক্ষে ৭টি শক্তিশালী বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরাট করে ভাঙ্গন রোধে ব্যর্থ চেষ্টা করা হচ্ছে যা অনেকটাই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলছে এলাকাবাসী । এর ফলে ভাঙ্গন রোধ তো দূরের কথা ভাঙ্গন আরো বাড়বে। সাময়িকভাবে ভাঙ্গন রোধ করা হলেও ভাঙ্গন এলাকায় গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করায় নদীর তলদেশ ফাঁকা হওয়ার করনে ভবিষ্যতে নদী বেষ্টিত এলাকা গুলোতে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়ে নদীর প্রসার ঘটবে ।

ডালিয়া পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভাঙ্গন রোধে ইমারজেন্সি ওয়ার্কের কজে জিও ব্যাগে বালু ভরাট করার জন্য তিস্তা নদী হতে বালু উত্তোলন করার বিধান আছে। ফসলী জমি হারিয়ে হাজারো কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছে । বন্যা কবলিত এলাকা ও ভাঙ্গন কবলিত এলাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরানুজ্জামান দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান,বন্যা কবলিত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা জমা দিয়েছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ মেট্রিক টন চাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চতুর্থবারের মতো তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে । এর আগে ২৯ জুলাই রাতে প্রথমবার ৭ সেন্টিমিটার, ৩ আগস্ট ৪০ সেন্টিমিটার এবং ১২ আগস্ট ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিপদ সীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ।

এদিকে বন্যার পানি কমতে শুরু করলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ডান তীর এলাকার ১৫ টি মৌজায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়। পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ওই এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামে সাবেক ইউপি সদস্য তফেল মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে নদীর একটি নতুন শাখা সৃষ্টি হয়ে সহস্রাধীক একর আবাদি জমি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে । এতে শতাধিক পরিবার গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে নিরাপদের জন্য আত্মীয়ের বাড়ি কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় তিস্তা নদীর তলদেশ হতে বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন,জরুরি কাজে তিস্তা নদী হতে বালু উত্তোলনের বিধান রয়েছে তবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে নয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরানুজ্জামান বলেন,তিস্তা নদী হতে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। দ্রুত মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তিস্তা নদী হতে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হবে। অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক মন্তব্য

%d bloggers like this: