মো: জাহিদুল ইসলাম,
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি।
উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর আগে বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রথমে ৭ সেন্টিমিটার উপরে পৌঁছায়, পরে কিছুটা কমে চার সেন্টিমিটারে নেমে আসে। রাতের বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে ভোরের দিকে আবারো তা বেড়ে ১১ সেন্টিমিটার উপরে উঠে যায়।
টানা ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিপৎসীমার উপরে পানি প্রবাহিত হওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রাম ও চরাঞ্চল পানি প্লাবিত হয়েছে, ফলে পানির ভোগান্তিতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ নানা ফসলের ক্ষেত।
স্থানীয়রা বলছেন, জুলাইয়ের শেষ দিকে ও আগস্টের শুরুতে দুই দফা পানি বৃদ্ধির পর এবার তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তারা বারবার ত্রাণের বদলে স্থায়ী সমাধান হিসেবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।
ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। এতে ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরস্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের বোল্ডারের চর, খোকার চর, খাড়াপাড়া, ফ্লাটপাড়াসহ তিস্তাপারের বিভিন্ন চরের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মানুষ আতঙ্কে আছেন।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে নদীর কয়েকটি চ্যানেল বের হয়ে পূর্বখড়িবাড়ী মৌজায় বেশ কিছু আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে আমরা চ্যানেলগুলো বন্ধে কাজ করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব কাজে আমাদের সহযোগিতা করছে চরাঞ্চলের পরিবারের বাড়িঘরে পানি উঠেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। চলতি মৌসুমে এটি তিস্তায় তৃতীয় দফা বন্যা। জুলাইয়ের ২৯ তারিখে প্রথম দফায় এবং ৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। এবার ১৩ আগস্ট থেকে পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে এবং এখনো বিপদের আশঙ্কা কাটেনি।
এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর পানি উপচে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে পানি ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার ছোট খাতা এলাকায় তিস্তা নদীর পানি উপচে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এই কারণে অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি প্রবেশের পর থেকে ওই এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুসহ বৃদ্ধদের নিয়ে চরম দুর্ভোগে পরেছেন এলাকাবাসীরা। অনেক পরিবার শিশু ও গবাদি পশু নিয়ে বিদ্যালয় ও উঁচু জায়গায় নেওয়ার চেষ্টা করছেন। স্থানীয়রা জানান, দ্রুত এই সমস্যার ব্যবস্থা না নিলে আবাদি যেটুকু জমি রয়েছে সব ভেসে যাবে। ইতোমধ্যে তারা বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপদে দিন পার করছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বিভাগের (বাপাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, তিস্তা নদীর ভেতরেই যে ফ্লাট লেন এরিয়াগুলি রয়েছে পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর পানি উপচে ক্যানেল হয়ে গেছে। এগুলি সাধারণত নো ল্যান্ড এরিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়। ইতোমধ্যে আমাদের অফিস থেকে পানি প্রবেশের যে পথগুলি রয়েছে সেসকল পথ বন্ধের জন্য কাজ করা শুরু হয়েছে।