
মুকুল বসু বোয়ালমারী ফরিদপুর :
জনবল সংকটের কারণে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে যেখানে প্রতি হাজারে অন্তত দুজন চিকিৎসক প্রয়োজন, সেখানে বোয়ালমারী উপজেলার দুই লাখ ৫৬ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র ১০ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। অর্থাৎ প্রায় পঁচিশ হাজার ৬০০ জনের জন্য একজন চিকিৎসক কর্মরত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ১৭৮। সেখানে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১০২ জন, আর শূন্য পদের সংখ্যা ৭৬। সেক্ষেত্রে মোট জনবলের ৪৩ শতাংশই শূন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম শ্রেণির পদের সংখ্যা ৩০টি। এর মধ্যে ১৬টি পদ শূন্য। দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে মঞ্জুরীকৃত ৪২ পদের বিপরীতে ১১ পদ শূন্য, তৃতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে ৭৭ পদের বিপরীতে ৩৩ পদ শূন্য। চতুর্থ শ্রেণির ক্ষেত্রে ২৯ পদের স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ১৩ জন। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ সংখ্যা ৩০টি। কিন্তু ১৪ জন চিকিৎসক নিয়োগপ্রাপ্ত থাকলেও এর মধ্যে তিন জন প্রেষনে অন্যত্র কর্মরত এবং একজন অনুমোদিতভাবে অনুপস্থিত। এছাড়া এনেস্থেটিস্ট, ডেন্টাল সার্জন, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজিস্ট পদে কেউ কর্মরত নেই। নার্সের ৪২টি পদের মধ্যে ১১টি পদ শূন্য। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ৮টি পদের মধ্যে ৬টি এবং ফার্মাসিস্টের ৬টি পদের মধ্যে ৫টি শূন্য। তিনজন নিরাপত্তা প্রহরীর মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র একজন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১০৬টি পদের মধ্যে ৪৯টি পদ শূন্য। উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়নের আড়াই লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালটি ২০০৬ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর ২০২২ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দিলেও আজ পর্যন্ত ১০০ শয্যার কোন সুযোগ সুবিধাই নিশ্চিত হয়নি। বোয়ালমারী উপজেলার উল্লিখিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য একমাত্র সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এছাড়া উপজেলার স্বল্প আয়ের মানুষের নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের একমাত্র ঠিকানা। অথচ এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনুমোদিত পদের বেশির ভাগই শূন্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বারংবার। তবে দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন এখনো পরিলক্ষিত হয়নি। শুধু বোয়ালমারী নয়, পাশের আলফাডাঙ্গা, মধুখালি, কাশিয়ানি, সালথা উপজেলা থেকেও রোগী আসে এ হাসপাতালে। অথচ চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রত্যাশিত সেবা রোগীরা পাচ্ছেন না। উপজেলার পরমেশ্বরদী গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক নৃপেন্দ্র নাথ দত্ত বলেন, ‘আমার জমজ দুই সন্তান সর্দি জ্বরে আক্রান্ত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন শিশু ডাক্তার নাই। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বোয়ালমারীতে সপ্তাহে চারদিন রোগী দেখেন। তাকে দেখাতে এসেছি।’
উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হক বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীরা যেমন প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি চিকিৎসকদেরও সীমাবদ্ধতার মধ্যে যথার্থ সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ১৭৮। সেখানে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১০২ জন, আর শূন্য পদের সংখ্যা ৭৬। হাসপাতালে চিকিৎসকের অনেক পদ শূন্য। জনবল সংকটে সঠিক সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। আউটডোরে একজন চিকিৎসককে প্রতিদিন গড়ে ২০০ রোগী দেখতে হচ্ছে, যা শুধু অসম্ভবই নয়, মারাত্মক অসম্ভব।



