Tuesday, August 5, 2025
Tuesday, August 5, 2025
Homeবিশেষ প্রতিবেদননীলফামারীর ডিসি-এসপির মাইলস্টোনের শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী সমাধিতে শ্রদ্ধা।

নীলফামারীর ডিসি-এসপির মাইলস্টোনের শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী সমাধিতে শ্রদ্ধা।

মো: জাহিদুল ইসলাম,
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি।

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। বুধবার (২৩ জুলাই, ২০২৫) সকালে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়ায় মাহেরীন চৌধুরীর সমাধিস্থলে গিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শিক্ষিকা মাহেরীনের এই আত্মত্যাগ সমাজে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, এবং এর প্রতি সম্মান জানাতেই এই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান এবং পুলিশ সুপার এ.এফ.এম তারিক হোসেন খান মাহেরীন চৌধুরীর সমাধিস্থলে উপস্থিত হন। তারা মাহেরীন চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। পুলিশ সুপার তার বক্তব্যে বলেন, “একজন শিক্ষিকার এমন আত্মত্যাগ সমাজের জন্য অনুকরণীয়। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।” এই আবেগঘন পরিবেশে উপস্থিত ছিলেন জলঢাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন, জলঢাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেনসহ জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মাহেরীন চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরাও এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, এবং তাদের উপস্থিতিতে পুরো পরিবেশটি আরও বেশি আবেগঘন হয়ে ওঠে।

গত ২১ জুলাই, সোমবার, দুপুরে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্লাস চলাকালীন পাশের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়ে। মুহূর্তেই ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। ধোঁয়া আর আতঙ্কে চারপাশ যখন হাহাকার, তখনও শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী তার শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের রক্ষায় তার এই সাহসী পদক্ষেপ ছিল এক অসাধারণ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত। একপর্যায়ে তিনি নিজেই আগুনে আটকে পড়েন এবং তার শরীরের অধিকাংশ দগ্ধ হয়। গুরুতর অবস্থায় তাকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। দীর্ঘক্ষণ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই ঘটনা পুরো জাতিকে শোকাহত করেছে এবং তার এই আত্মত্যাগ মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করেছে।

মাহেরীন চৌধুরীর বাড়ি ছিল নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি গ্রামে, সেখানেই তার জন্ম। তিনি স্থানীয় বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান এবং তার আত্মত্যাগ স্থানীয়দের কাছে তাকে এক বিশেষ সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। পারিবারিক পরিচয়েও তিনি একজন পরিচিত মুখ ছিলেন; তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। তার বাবা মহিতুর রহমান ছিলেন জিয়াউর রহমানের খালাতো ভাই এবং দাদি রওশানারা চৌধুরী ছিলেন জিয়াউর রহমানের খালা। তার বাবা মহিতুর রহমান চৌধুরী ও মা সাবেরা চৌধুরী দুজনেই সমাজসেবায় সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। এই পারিবারিক ঐতিহ্য তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের এই শ্রদ্ধা নিবেদন প্রমাণ করে যে, শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগ জাতীয় পর্যায়েও স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি শুধু একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়, বরং সমাজের প্রতি তার অসামান্য অবদানের একটি স্মরণীয় প্রতীক।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক মন্তব্য

%d bloggers like this: