মো.সাইদুল ইসলাম (মৌলভীবাজার)।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শুকুরউল্যা গ্রামে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কৃষক আব্দুল মান্নান। প্রচলিত ধারা ভেঙে তিনি মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে কেবল আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হননি, বরং স্থানীয় কৃষকদের মাঝেও সৃষ্টি করেছেন নতুন আশার আলো।
মাত্র সাড়ে ১২ বিঘা জমিতে আগাম জাতের টমেটো চাষ করে লাখো টাকার আয় করেছেন মান্নান। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালচিং প্রযুক্তি জমিকে রোগবালাই ও আগাছা থেকে সুরক্ষিত রাখে, পানি ও সার ব্যবহারে সাশ্রয় করে এবং গাছের আয়ু দীর্ঘায়িত করে। ফলে একদিকে উৎপাদন খরচ কমে আসে, অন্যদিকে ফলন বাড়ে বহুগুণে।
মান্নান জানান, চলতি মৌসুমে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা এবং আরও ১০–১২ লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে। তবে বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি টমেটো ১০০–১২০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় তিনি আশা করছেন এবার বিক্রি হবে প্রায় ৫০–৬০ লাখ টাকার টমেটো। সব খরচ বাদ দিয়ে তার নিট মুনাফা দাঁড়াতে পারে ৩০–৩৫ লাখ টাকা। গত বছরও তিনি ১০ বিঘা জমিতে একই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে লাভ করেছিলেন প্রায় ২৫–২৬ লাখ টাকা।
কৃষি বিভাগের ভাষায়, “মালচিং পদ্ধতিতে খরচ কম, শ্রম কম, তবুও ফলন বেশি। অসময়ে টমেটো চাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগও তৈরি হয়। এই পদ্ধতিতে আগাছার উৎপাত নেই, সেচের পানি জমে চারার ক্ষতি হয় না এবং অতিরিক্ত সার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এতে জমির উর্বরতা যেমন বাড়ে, তেমনি গাছের আয়ু বেড়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।”
বর্তমানে মান্নানের বাগানে ১২–১৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। পুরুষ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৪৫০ টাকা এবং নারী শ্রমিকদের ৩০০ টাকা প্রদান করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, “উপজেলায় এ বছর প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে আগাম টমেটো চাষ হয়েছে। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটোর শিকড় আর্দ্রতা বজায় রেখেও অক্ষত থাকে, ফলে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ভালো ফলন আসে। কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, আর কৃষি অফিস থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।”
আধুনিক মালচিং প্রযুক্তি আজ শুধু আব্দুল মান্নানের সফলতার গল্প নয় এটি হয়ে উঠেছে কমলগঞ্জের কৃষকদের সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।