Friday, November 7, 2025
Friday, November 7, 2025
Homeবিশেষ প্রতিবেদনরঙ-ঢঙে মেতেছে কমলগঞ্জের মণিপুরী মহারাসোৎসব, ভোরে শেষ হলো মহালীলা।

রঙ-ঢঙে মেতেছে কমলগঞ্জের মণিপুরী মহারাসোৎসব, ভোরে শেষ হলো মহালীলা।

মো. সাইদুল ইসলাম, (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:

নৃত্য, সংগীত আর ধর্মীয় আবেগে মুখরিত পরিবেশে শেষ হলো মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী মহারাসোৎসব। দীর্ঘ রাতের ধারাবাহিক উপাসনা, ভজন আর মনোহর নৃত্যাভিনয়ের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার ভোররাতে সমাপ্তি ঘটে এই বার্ষিক মহামিলনের। কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে আয়োজিত রাসলীলায় অংশ নেয় দেশ-বিদেশের হাজারো দর্শনার্থী, যা মণিপুরী সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত।

এবারও মাধবপুরের ঐতিহাসিক শিববাজার জোড়ামণ্ডপ মাঠে আয়োজন করে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ। শতাধিক শিল্পী, সংগীতশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীর পরিবেশনায় সারা রাত জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী রাসনৃত্য। অপরদিকে, আদমপুরের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সের পাশের মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় মী-তৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়ের পৃথক রাসউৎসব।

উৎসবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির যৌথ টহলে সুনিশ্চিত হয় নির্বিঘ্ন আয়োজন। মেলার চারপাশে ছিল লোকজ সামগ্রীর দোকান, ধর্মীয় সামগ্রী, খেলনা ও খাবারের স্টল,যা উৎসবপ্রেমীদের আকর্ষণ করে।

ললিতকলা একাডেমির সংগীত প্রশিক্ষক,সুতপা সিনহা বলেন,রাসলীলা শুধু একটি ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক উৎসব নয়, এটি আমাদের অন্তরের ভক্তি, নন্দনতত্ত্ব ও শিল্পসাধনার এক অনন্য সমন্বয়। নৃত্য, সংগীত, পোশাক, আলোকসজ্জা,সব মিলিয়ে এই উৎসব আমাদের শিকড়ের সঙ্গে গভীর সংযোগ ঘটায়। নতুন প্রজন্ম যদি এই ঐতিহ্যকে কাছ থেকে অনুভব করে, তবেই আমাদের সংস্কৃতি টিকে থাকবে।”

উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব), প্রভাস চন্দ্র সিংহ বলেন, মণিপুরী রাসলীলা আসলে প্রেম, ঐক্য ও মানবতার প্রতীক। কৃষ্ণ-রাধার প্রেমের মাধ্যমে আমরা আত্মিক সৌন্দর্যের প্রকাশ দেখি। প্রতি বছর যখন এই লীলা মঞ্চস্থ হয়, তখন মনে হয় পুরো কমলগঞ্জই এক শিল্পমন্দিরে পরিণত হয়েছে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব।”

সাধারণ সম্পাদক, মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ, শ্যাম সিংহ বলেন, মাধবপুরের জোড়ামণ্ডপ রাসোৎসব শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এখানে বর্ণ, ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হন আনন্দের বন্ধনে।এই আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে প্রায় তিন সপ্তাহ কাজ করতে হয়। প্রতিবারই আমরা চেষ্টা করি আয়োজনটিকে আরও শৃঙ্খল, সুন্দর ও সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে।

মণিপুরী সমাজে রাসলীলার রয়েছে নানা ধরন,নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, বসন্তরাস, বেনিরাস, দিবারাস ও মহারাস। তবে কার্তিক পূর্ণিমার রাতে অনুষ্ঠিত উৎসবটিকে বলা হয় ‘মহারাস’ বা ‘পূর্ণিমারাস’। এদিনে কৃষ্ণ-রাধার প্রেমকাব্যের অবিনশ্বর রূপ ফুটে ওঠে নৃত্যনাট্যের প্রতিটি পর্বে।

স্থানীয়দের ভাষায়, এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, এটি এক প্রাণের উৎসব, যেখানে মিলেমিশে যায় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর সৌহার্দ্যের অখণ্ড বন্ধন।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক মন্তব্য

%d bloggers like this: