মো.সাইদুল ইসলাম (মৌলভীবাজার)।
বাংলাদেশের “চায়ের রাজধানী” মৌলভীবাজার যেখানে বিস্তীর্ণ চা বাগানের সবুজ সমারোহে প্রতিদিন নতুন গল্প রচিত হয় প্রকৃতি আর মানুষের। তবে এবার সেই গল্পে যুক্ত হয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সংলগ্ন প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা রূপ নিয়েছে শিল্প-সৌন্দর্যের ক্যানভাসে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিনের উদ্যোগে আঁকা এই রঙিন আল্পনা ইতিমধ্যেই পর্যটক ও স্থানীয়দের নজর কেড়েছে।
ভানুগাছ রোডের বিটিআরআই মোড় থেকে শুরু করে সংলগ্ন ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে সাজানো আল্পনার ছন্দ যেন সবুজ চা বাগানের নীরব নিসর্গে এক অপূর্ব শৈল্পিক সংযোজন। লাল, নীল, হলুদ, সাদা বিভিন্ন রঙের আলপনা কেবল পথকে নয়, পথচারীদের হৃদয়কেও করেছে রঙিন। এই রাস্তা এখন আর কেবল চলাচলের মাধ্যম নয়, বরং আনন্দ, ভালোবাসা আর সৌন্দর্য খোঁজার নতুন গন্তব্য।
রাস্তার দুই পাশে ভিড় জমেছে নানা বয়সী মানুষের। কেউ মোবাইলে বন্দি করছেন রঙিন নকশার ছবি, কেউ ধীর পায়ে হাঁটছেন আল্পনার ছন্দে। কেউ আবার শিশুকে শিখিয়ে দিচ্ছেন“এই হলো আমাদের সংস্কৃতির রঙ।” পর্যটকরা বলছেন, এ যেন অস্থায়ী নয়, স্থায়ী এক শিল্পকর্ম।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক শারমিন জাহান বলেন, “চা বাগান দেখতে এসেছিলাম, কিন্তু এ রাস্তায় এসে ছবি তুলতে তুলতেই সময় কেটে গেল। এমন উদ্যোগ সত্যিই অসাধারণ। বৃষ্টির মধ্যে ছবির আনন্দই ছিল আলাদা। আমরা চাই, শ্রীমঙ্গলের আরও কিছু রাস্তা এভাবে সাজানো হোক।”
শ্রীমঙ্গল ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি মো. কামরুল হাসান চৌধুরী জানান, “দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জে ছুটে আসেন। এখানকার পাহাড়, বন, চা-বাগান, ঝরনা, হ্রদ সব মিলিয়ে এ অঞ্চল দেশের সেরা পর্যটন স্পট। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সবসময় প্রস্তুত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, “শ্রীমঙ্গল হচ্ছে প্রকৃতি, চা আর আতিথেয়তার শহর। আমরা চাই, এই সৌন্দর্যকে আরও শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করতে। যেন দেশি-বিদেশি ভ্রমণকারীরা শ্রীমঙ্গলে এসে শুধু চোখে নয়, হৃদয়ে ধারণ করেন এক অনন্য অভিজ্ঞতা।”
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “রাস্তার আল্পনা শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নিয়মিত এ ধরনের উদ্যোগ নিলে পর্যটন শিল্প আরও বিকশিত হবে।”
সবুজ চা বাগানের মাঝখানে আঁকা এই রঙিন আল্পনা এখন শ্রীমঙ্গলের নতুন আকর্ষণ। এটি কেবল এক রাস্তা নয়, বরং প্রকৃতি ও শিল্পের মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এক মোহনীয় ক্যানভাস, যা শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্যকে নিয়ে যাচ্ছে নতুন উচ্চতায়।