
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
মোঃসফিকুল ইসলাম শিবগঞ্জে গরুর গোবর থেকে গুঠা তৈরী করে সহস্রাধীন গৃহিনীর বাড়তি আয়ের কর্মসংস্থান হয়েছে। যেখানে কোন পুঁজি বা মূলধন লাগে না। শুধু বাড়িতে দুর/চারটা গরু থাকলেই হয়। আর শিবগঞ্জে প্রায় প্রতি পরিবারেই গরু পালন করে।
এই গুঠা শিবগঞ্জে নতুন নয়। শতাধিক বছর থেকে এ ঐতিহ্যবাহী গুঠা তৈরীর প্রথা প্রচলিত আছে। গুঠা তৈরী করে শিবগঞ্জে উপজেলার নিম্নবৃত্তি পেশার গৃহিনীরা। তারা গুঠা তৈরী করে তা বিক্রী করে সংসারের নানা কাজে সহযোগীরা করে থাকে। যেমন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ,পোশাক কেনা, নিজের শাড়ি,জামা সহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়। শুধু তাই নয় গরিরেবর ঘরের এ গৃহীনরা তিল তিল করে টাকা জমিয়ে আকস্মিক বিপদের সময়ও কাজে লাগায়। এ গুঠা গ্রাম এলাকা থেকে শত শত ভ্যান চালন ক্রয় করে জেলা ও জেলার বাইরে রপ্তানী করে। এমনকি বিদেশেও রপ্তানী করা হয়। সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গুঠা তৈরীর সময় প্রায় ৩০-৩৫জন গৃহিনীর সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের এ কাজটি সংসারের কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে করা যায়। শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের এক গৃহিনী ও অনার্স পড়–য়া মাসা. বৃষ্টি জানান,আমার স্বামী আমাকে চারটি গরু কিনে দিয়েছেন। লেখা্পড়া ও সংসারের কাজ করেও আমি গরু পালন করি। এটি আমার এক ধরনের নেশা। তার সাথে সাথে গরুর গোবর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি গুঠা তৈরী করে বাঁশ বেঁধে তারে সারিবন্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে শুকাই। মাঝে মাঝে এপিট ওপিট উল্টাইতে হয়। শুকিয়ে গেছে বাঁশের তৈরী করা মাচায় গুছিয়ে রাখি। মাস থেকে বা ১৫দিন পর ভ্যান নিয়ে আসা পাইকার বা ক্রেতাদের কাছে গুঠা প্রতি দুই টাকা দরে বিক্রী করে। তাতে প্রতিমাসে আমার আয় হয় প্রায় ১৮০০ টাকা। যার মধ্যে থেকে আমার স্বামীকে কিছু টাকা দিই এবং কিছু টাকা আমার কাছে রেখে বিভিন্ন কাজে খরচ করি। এ কাজে আমার লেখাপড়া ও সংসারের কোন ক্ষতি হয় না। শুধু বাড়তি কিছু পরিশ্রম করতে হয়। তিনি আরো জানান, এ গুঠা দিয়ে সারা বছর জ্বালানীর যোগান দেয়। দাই পুখুরিয়া ইউনিয়নের একেবারে অসহায় গৃহিনী আলেয়া খাতুন মাত্র একটি গরুর গোবর থেকে মাসিক ৬০০ টাকা লক্ষ্ীপুর গ্রামের গৃহবধূ আয়েশা খাতুন মাসিক ৩০০০ টাকা আয় করে সংসারের কাজে খরচ করে। সনাতন ধর্মানুসারী শ্রী সবিতা সাহা জানান আমাদের ৩৫টি গরু সারাদিন মাঠে চরায় শুধু রাতের গোবর থেকে প্রতিদিন ১০০ টি গুঠা তৈরী করি গ্রামের চায়েূর দোকানদার ও ভ্যানওয়ালার নিকট বিক্রি করে মাসিক ৬০০০ টাকা আয় করে গরুর খাবার ক্রয় করি। বীর মুক্তিযোদ্ধ তসলিম উদ্দিন বলেন গুঠা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। আমাদের মা খালারাও এ কাজটি করেছেন। এর মাধ্যমে গ্রাম্য মহিলারা সাংসারিক কাজের পর গুঠা তৈরী করে সংসারের স্বচ্ছলতা আনে এবং সংসারে সারা বছরের জ্বালানীর ব্যবস্থাও হয়। গুঠা জ্বালানী হিসাবে ব্যবহারিত হওয়ায় গাছ কাটা কম হয় এবংয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। এটি আমাদের এলাকায় কুটির শিল্পের পর্যায়ে পড়ে। শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, গুঠা একটি উত্তম জ্বালানী। এ জ্বালানীর ছাই একটি উত্তম সার। ্এই গুঠা তৈরীর কারিগর জেলার শত শত মহিলা বাড়তি আয় করতে পারে। আমি চেষ্টার করবো একটি কুটির শিল্পের আওয়াতায় আনার জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃ পক্ষের সুদৃষ্টি কামনায় আলোচনা করবো।