Sunday, June 15, 2025
Sunday, June 15, 2025
Homeজাতীয়তদারকির দায়িত্ব পালন করা ৬৪ সচিবের আমলনামা খোঁজা হচ্ছে।

তদারকির দায়িত্ব পালন করা ৬৪ সচিবের আমলনামা খোঁজা হচ্ছে।

২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে সারা দেশে কয়েক দফায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সে সময় জরুরি সেবা ছাড়া বাকি সবাইকে ঘরে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। সেই সময়ে ‘লকডাউন’ চলাকালে প্রান্তিক মানুষকে সরাসরি সহায়তার জন্য ৬৪ জেলায় ৬৪ সচিবকে সরকারী সহায়তা বা তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক এই সচিবরা দায়িত্ব নিয়ে সেই সময়ে সরকারের পক্ষে ত্রাণ ও টাকা বিতরণ, ডিসিদের ওপর খবরদারি এবং জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিরোধীদলের ওপর আক্রমণে সহযোগিতার আশ্বাসসহ জেলার উন্নয়ন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেখভাল করেন।

সূত্রমতে, সচিবদের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তাদের ইচ্ছায় সবকিছু পরিচালিত হয়েছে। অনেকেই সহায়তার অর্থ ঠিকমতো পাননি।গ্রামে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা করা এবং তাদের কাছে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতে গিয়ে কোনো কোনো সচিব শত শত কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

করোনার ওই সময় যে ৬৪ সচিব সরকারি ত্রাণ বিলি-বণ্টন এবং দুর্গতদের তালিকা করার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের ভূমিকা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তারা ‘কট্টর আওয়ামী সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত। ওই সচিবদের কারো কারো বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২ কোটি মানুষকে তথা ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেয় তখনকার সরকার। এ জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। কিন্তু ১৫ লাখ পরিবারের কাছে টাকা পৌঁছানো যায়নি যথাযথ তথ্য ভান্ডারের অভাবে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ কৃষককে এককালীন ৫ হাজার টাকা করে নগদের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য প্রতি জেলায় একজন করে সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে আদেশ জারি করেছিল তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

একাধিক সূত্রের অভিযোগে জানা গেছে,৬৪ জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক এই সচিবরা দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি লুটপাট করা ছাডাও নিয়মনীতি বহির্ভুত ভাবে ইচ্ছামতো সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা এবং ডিসিদের ওপর ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।এই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ৬৪ জেলায় দায়িত্ব পালন করা ৬৪ জন সচিবেরই ইতোমধ্যেই তথ্য সংগ্রহ করছে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার। সিংহভাগ সচিবের বিরুদ্ধে লুটপাট ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানান অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির মিল / সততা পাওয়া গেছে !
তবে এরইমধ্যে এই ৬৪ সচিবের সবাই অবসরেও গেছেন। তবে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযুক্ত থাকায় কয়েকজনকে আবার গ্রেফতারও করা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আদেশে উল্লেখ করা দায়িত্ব পালন করা সেইসব সচিবরা হলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, আইসিটি বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব এবং নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, গণপূর্ত সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সাবেক সচিব পবন চৌধুরী, সড়ক বিভাগের সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অ্যাকাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবুল কাশেম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এম আলী আজম, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, বিপিএটিসির রেক্টর মো. রকিব হোসেন, যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. আখতার হোসেন, রেল সচিব সেলিম রেজা, পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, সমবায় সচিব রেজাউল আহসান, মুক্তিযুদ্ধ সচিব তপন কান্তি ঘোষ, খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, শিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মৎস্য সচিব রওনক মাহমুদ, স্বাস্থ্যশিক্ষা সচিব মো. আলী নূর, পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী, ধর্ম সচিব মো. নুরুল ইসলাম ও বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছা।

এছাড়াও দায়িত্ব পালন করেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পরিবেশ সচিব জিয়াউল হাসান, স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, কারিগরি ও মাদরাসা সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, নৌসচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে(সমন্বয়ক) সচিব মো. কামাল হোসেন, পিপিপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ, শ্রম সচিব একেএম আবদুস সালাম, আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিসংখ্যান সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, পিএসসি সচিব মোছা. আছিয়া খাতুন, দুর্যোগ সচিব মোহাম্মদ মোহসীন, সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল আরেফীন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. মামুন আল রশীদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম, পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা (গাইবান্ধা), বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান, তথ্য সচিব খাজা মিয়া, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, বিমান সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জাকিয়া সুলতানা, সমাজকল্যাণ সচিব মাহফুজা আখতার, ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান, পার্বত্য সচিব মোছাম্মৎ হামিদা বেগম, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মোকাব্বির হোসেন এবং মহিলা ও শিশুসচিব সায়েদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান জানিয়েছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোভিড-১৯-এর সময় ত্রাণ ও টাকা বিতরণের অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখা হবে। সেই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা কী কী দায়িত্ব পালন করেছেন, সেসব তথ্য জানতে চাওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক মন্তব্য

%d bloggers like this: