
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে উৎকোচ ছাড়া কোন কাজ হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। মিউটেশনে তিন থেকে দশ হাজার, অন্যান্য কাজে ৫শ থেকে এক হাজার টাকা উৎকোচ না দিলে সেবা প্রত্যাশীদের দিনের পর দিন অফিসে ঘুরতে হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, উপজেলার চতুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তহসিলদার জহিরুল হক জমির নামজারি, তদন্ত প্রতিবেদন, খাজনা আদায়সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে উৎকোচ দাবি করেন। ওই ভূমি অফিসের পার্শ্ববর্তী কম্পিউটারের দোকানে জমি-জমার কাজ করতে আসা ব্যক্তিদের কৌশলে তহশিলদারের কাছে নিয়ে যায় কম্পিউটারের দোকান মালিকেরা। এরপর আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। যেখানে একটি মিউটেশনের সরকারি চার্জ ১ হাজার ১শত ৭০ টাকা, সেখানে সেই কাজের জন্য নেওয়া হচ্ছে প্রকারভেদে তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আহসান হাবিব হাসান বলেন, ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন ফাইল নড়াচড়া করে না। এমনকি এসিল্যান্ড অফিসেও যায় না। কমপক্ষে ৪/৫ হাজার টাকা দিলে জমির মিউটেশন হয়। চতুল ইউনিয়নবাসী এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আমরা স্থানীয়দের স্বাক্ষর নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
উপজেলার চতুল ইউনিয়নের বাইখীর এলাকার মিলন শেখ বলেন, ঘুষ দিলে কাজ হয়, ঘুষ না দিলে কাজ হয় না। চতুল ভূমি অফিসের তহশিলদার জহিরুল হক নিজের নিয়ন্ত্রণে কয়েকজন দালাল রেখে সেবাগ্রহীতাদের সাথে কথা বলান। কখনো কখনো তিনি নিজেই অফিসের খরচের কথা বলে অতিরিক্ত অর্থ নেন। এহরামুজ্জামান নামে একজন সেবা প্রত্যাশী বলেন, বেশ কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছেন। বাবার নামে রেকর্ডীয় সম্পত্তি নামজারি করার জন্য গিয়েছিলাম চতুল ভূমি অফিসে। ওই অফিসে বেশ কয়েকবার যাওয়ার পর কোন কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে তহশিলদার বললেন অফিস খরচ না দিলে কিভাবে হবে। বাধ্য হয়ে এক হাজার টাকা দিযে আমার কাজটা করাতে হয়েছে। চতুল ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তি এই প্রতিনিধিকে বলেন, তহশিলদারের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তার আচার ব্যবহার ভালো না। মোবাইল রিসিভ করেন না। ঘুষ ছাড়া কোন কাজও করেন না। এ বিষয়ে অভিযুক্ত চতুল ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তহশিলদার জহিরুল হকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জানতে চাইলে চতুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নবাসীর অনেকের কাছ থেকেই তহশিলদার সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনলাইন সার্ভিস চালু হওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমেছে, তবে অনেকেই এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে না পারার কারনে দালালের খপ্পরে পড়েন। তখন তাদের অতিরিক্ত অর্থ নষ্ট হয়। মিডলম্যানের কাছে না গিয়ে সরাসরি এসিল্যান্ড অফিসে আসুন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, ভূক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।