Friday, September 19, 2025
Friday, September 19, 2025
Homeপ্রযুক্তিপড়া নিয়ে নতুন তথ্য গবেষণায় উঠে এলো।

পড়া নিয়ে নতুন তথ্য গবেষণায় উঠে এলো।

পড়া সহজ মনে হলেও, Max Planck Institute-এর নিউরোসায়েন্টিস্টদের একটি নতুন মেটা-অ্যানালাইসিস দেখিয়েছে, পড়ার সময় মস্তিষ্কে কতটা জটিল কার্যকলাপ ঘটে।

গবেষকরা ৩,০০০ জন পাঠকের উপর করা ১৬৩টি ব্রেইন ইমেজিং স্টাডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন—অক্ষর থেকে শুরু করে পুরো পাঠ্য পড়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মস্তিষ্ক কীভাবে বিভিন্নভাবে কাজ করে। এতে দেখা যায়, পাঠ্যবস্তুর উপর নির্ভর করে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় হয়।

তারা দেখেছেন, অধিকাংশ পড়ার কাজ মস্তিষ্কের বাম হেমিস্ফিয়ারে ঘটে, তবে কী পড়া হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে মস্তিষ্কের কার্যক্রম বদলে যায়।

একটি অক্ষর পড়লে ছোট একটি ভিজ্যুয়াল এলাকা সক্রিয় হয়।

শব্দ পড়লে বৃহত্তর নেটওয়ার্ক যেমন ফ্রন্টাল ও প্যারাইটাল অঞ্চল সক্রিয় হয়।

বাক্য পড়লে সিনট্যাক্স (বাক্যগঠন) ও অর্থ বোঝার সঙ্গে সম্পর্কিত এলাকাগুলো সক্রিয় হয়।

দীর্ঘ পাঠ্য পড়লে ওয়ার্কিং মেমোরির সঙ্গে জড়িত অংশগুলো কাজ করে।

এটি বোঝায়, পড়ার জটিলতা অনুযায়ী মস্তিষ্ক নিজেকে পুনর্গঠন করে—একই প্রক্রিয়াগুলো কেবল বাড়িয়ে কাজ করে না।

তারা আরও দেখেছেন, জোরে পড়ে শোনানো আর চুপচাপ পড়ার মধ্যে পার্থক্য আছে।

জোরে পড়লে শ্রবণ ও বাক-সঞ্চালন অঞ্চল সক্রিয় হয়।

চুপচাপ পড়ার সময় এক্সিকিউটিভ নেটওয়ার্ক বেশি সক্রিয় হয়, যা মনের ভেতরে “অভ্যন্তরীণ উচ্চারণ” তৈরি করে এবং আসল শব্দ উচ্চারণ বন্ধ রাখে। এতে বোঝা যায়, নিঃশব্দে পড়াও একটি সক্রিয় মানসিক কাজ।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, বাস্তব শব্দ বনাম অর্থহীন ছদ্মশব্দ (pseudowords) পড়ার সময় মস্তিষ্কে আলাদা রাস্তা সক্রিয় হয়।

বাস্তব শব্দ মেমোরি ও অর্থ বোঝার অংশকে সক্রিয় করে।

ছদ্মশব্দ অপরিচিত শব্দ উচ্চারণের জন্য নির্ধারিত অঞ্চলগুলোকে কাজে লাগায়।
এটি প্রমাণ করে যে, পরিচিতি অনুযায়ী মস্তিষ্কে দুটি আলাদা পঠন-পথ কাজ করে।

সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, সাধারণভাবে গতি ও সমন্বয়ের সঙ্গে জড়িত cerebellum-ও পড়ার সময় সক্রিয় থাকে—বিশেষ করে ডান দিক সব কাজে সক্রিয়, আর বাম দিক নিঃশব্দ পঠন ও শব্দ চিনে রাখার সময় বেশি কাজ করে। এতে বোঝা যায়, ভাষার প্রক্রিয়ায় cerebellum-এর ভূমিকা পূর্বের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি।

গবেষকরা সতর্ক করে বলেন, গবেষণায় সাধারণত যেসব পঠন-কাজ (যেমন—শব্দ আসল কি না বোঝা) ব্যবহার করা হয়, সেগুলো প্রাকৃতিক পড়ার প্রকৃত মস্তিষ্কীয় কার্যকলাপ পুরোপুরি ধরতে পারে না। এই পার্থক্যগুলো বোঝা গেলে ডিসলেক্সিয়ার মতো পাঠ-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো আরও ভালোভাবে বোঝা ও সমাধান করা সম্ভব হবে।

সংক্ষেপে বললে:
পড়া হলো একটি বহুমাত্রিক মানসিক কাজ, যেখানে মস্তিষ্ক বিভিন্ন অংশকে কাজে লাগিয়ে ধাপে ধাপে অর্থ গঠন করে। এই গবেষণা আমাদের শেখায়, “পড়া” যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবে তা ততটাই জটিল এবং মস্তিষ্কের বিস্ময়কর অভিযোজনের ফল।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক মন্তব্য

%d bloggers like this: